অজ্ঞতা নাকি ইতিহাস বিকৃতি (লালবাঘ রংপুর) এ লজ্জা ঠাকবো কিভাবে? Provat Bangla tv


কারমাইকেল কলেজ সংলগ্ন একটি ব্যস্ত এলাকা লালবাগ। সম্প্রতি এই লালবাগ মোড়ে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত হয় একটি ভাস্কর্য। নাম দেওয়া হয়েছে 'লালবাগের বাঘ '। ভাস্কর বিপ্লব দত্ত। বাগ শব্দটিকে কেন্দ্র করেই হয়তো এখানে বাঘের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে কিন্তু এটা যে কী মাত্রার নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক এবং কতবড় ইতিহাস বিকৃতি কিংবা মুক্তিকামী এক নারী শহিদের প্রতি কী নিষ্ঠুর অবমাননা তা লালবাগ নামের ইতিহাস খুঁজলেই বেরিয়ে আসে। আসুন একটু অতীতের দিকে চোখ ফেরাই ....
নবাব কন্যা শাহজাদি লাল বিবির নামে নামকরণ করা হয়েছিল রংমহলের একটি অংশের, যেখানে ছিল অজস্র ফুল গাছ ( বাগ< বাগান) । সেই জায়গাই বর্তমানের লালবাগ বাজার।
কে ছিলেন এই নবাব কন্যা লাল বিবি?
গা শিউরে উঠার মত এক ইতিহাস!
মোগল সম্রাট বাদশা শাহ্ আলমের আপন চাচাতো ভাই ছিলেন নবাব নূর উদ্দিন বাকের মোহাম্মদ জং। নবাব নূর উদ্দিন বাকের মোহাম্মাদ জং এর বড় কন্যা শাহজাদী লাল বিবি । লাল বিবির বিয়ে হয় বাদশা ২য় আকবর এর সাথে। তাঁদের পুত্র রেঙ্গুনে সমাহিত বাহাদুর শাহ্। লাল বিবি ছিলেন পিতার মতোই চরম ইংরেজ বিরোধী। তাই তিনি বাবার বাসায় (ফুলচৌকি, মিঠাপুকুর ) আসলেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে (প্রজা, ফকির, সন্ন্যাসী) যোগাযোগ করতেন এবং কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ করতেন। তাঁর এই ভূমিকার কথা ইংরেজ মহলে জানাজানি হয়ে যায় । সেবার ( ১৮৩২ -৩৩)তিনি ফুলচৌকি নগর থেকে ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহীদের সাথে মিলিত হতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে রংপুরের বর্তমান মীরগঞ্জ,তামপাট ইউনিয়ন এলাকায় এ্যামবুস করে এই মহামতি নারীকে হত্যা করে ইংরেজরা। সেখানে তাঁর সাথে আরও কয়েকজনকে হত্যা করা হয় যাদের মধ্যে রাজা ভবানী পাঠকও ছিলেন। ঐ এলাকাটির নাম "সমর দীঘি"। এখনও সমর দীঘিতে লাল বিবির কবর আছে । যেখানে লাল বিবিকে হত্যা করা হয় তার কিছুটা দূরত্বে ফকির বিদ্রোহীদের হত্যা করা হয়। এই স্থানটিকে এখনও স্থানীয় ভাবে 'জীয়তপুকুর' (জিহাদ পুকুর) বলা হয়।
---------------------------------------------
লালবিবি শহিদ হওয়ার দু 'শ বছর পূর্তি হতে এখনও দেড় যুগ বাকি। এরই মধ্যে কী অবলীলায় ভুলে গেলাম তাকে! রংপুরে তাঁর স্মৃতি রক্ষার কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনা। তাঁর নামে নেই কোন প্রতিষ্ঠান। লালবিবির বাগে এখন বাঘ চড়ে বেড়ায় .... আর বিলুপ্ত প্রায় কবরে নিরন্তর ডেকে যায় ঝিঁঝি পোকা ।

তথ্য সূত্র :
১। পলাশী যুদ্ধোত্তর আজাদী সংগ্রামের পাদপীঠ : হায়দার আলী চৌধুরী।
২। কিংবদন্তীর রংপুর : মতিউর রহমান বসুনীয়া
৩। ১৮৫৭'র সিপাহী বিদ্রোহে রংপুর : ঋদ্ধ
৪।ভাস্কর্য : লালবাগের বাঘ

কলমে
ইয়াসির আরাফাত শুভ
নির্বহী সম্পাদক
প্রভাত বাংলা টিভি
copyright: @Provat Bangla tv     

Comments